ধৈর্য মুমিনের জীবনের মহৌষধ

  • Company Logo
    , বর্তমান
    প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার ১০:২৩ পিএম
ধৈর্য মুমিনের জীবনের মহৌষধ

মানবজীবনের পথচলা কখনোই শুধু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা নয়। এই পৃথিবীর বিচিত্র বাস্তবতায় চলতে গিয়ে মানুষকে নানা বিপদ, বিপর্যয় ও অপ্রত্যাশিত সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। তখন মনে হয়, মুক্তির আর কোনো উপায় নেই। অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা আর হতাশা যেন চারদিক ঘিরে ধরে। মনে হয়—“আর কত ধৈর্য ধরা সম্ভব? মুক্তি আদৌ মিলবে কি?”

কিন্তু এটি বাস্তবতা নয়।

কারণ, কঠিনতম সময়েও মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার সঙ্গে থাকেন—যদি সে ধৈর্য ধারণ করতে পারে। আল্লাহ এমনভাবে বিপদ থেকে মুক্তি দেন, যা মানুষের কল্পনারও বাইরে। কোরআনুল কারিমে বারবার ঘোষণা করা হয়েছে, মুক্তির পথ ধৈর্যের ভেতরেই নিহিত।

সুরা আলে ইমরানের ২০০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে—“হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং ধৈর্যে প্রতিযোগিতা করো।”
সুরা জুমারের ১০ নম্বর আয়াতে রয়েছে—“ধৈর্যশীলদের প্রতিদান সীমাহীনভাবে দেওয়া হবে।”
আর সুরা বাকারার ১৫২ আয়াতে বলা হয়েছে—“হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।”

‘সবর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ থামিয়ে রাখা বা সংযম করা। ইসলামী পরিভাষায় এর মানে হলো—নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্লাহর জন্য দৃঢ় থাকা। ইবনুল কাইয়্যেম (রহ.) ধৈর্যকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন—

১. আনুগত্যে ধৈর্য: আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ মানতে দৃঢ় থাকা, তা যত কঠিনই হোক না কেন।
২. পাপ থেকে বিরত থাকার ধৈর্য: যা নিষিদ্ধ, তা যত আকর্ষণীয়ই হোক না কেন, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
৩. বিপদে ধৈর্য: দুঃখ-কষ্ট, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিপর্যয়ের সময় ধৈর্য ধরে থাকা।

আল্লাহ তাআলা বলেন—“আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।” (সুরা বাকারাহ: ১৫৫)

অতএব, পৃথিবী মূলত পরীক্ষা ও ধৈর্যের স্থান। বিপদ-আপদ এখানে ব্যতিক্রম নয়, বরং স্বাভাবিক বাস্তবতা। মানুষের ঈমান যত দৃঢ় হয়, পরীক্ষা তত বড় হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—“সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা নেওয়া হয় নবীদের থেকে, তারপর যারা তাদের নিকটতম, তারপর যারা তাদের পরবর্তী।” (মুসনাদে আহমাদ, ৬/৩৬৯)

তবে পরীক্ষা কখনো কামনা করা উচিত নয়; বরং মুমিন আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাইবে এবং একইসঙ্গে ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করবে। হাদিসে এসেছে—“যে ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যের শক্তি দান করবেন। আর ধৈর্যের চেয়ে উত্তম কোনো দান নেই।” (বুখারি, হাদিস: ১৪৬৯)

ইতিহাস সাক্ষী, আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সবসময় পরীক্ষা করেছেন। সর্বাধিক পরীক্ষা দিয়েছেন নবী-রাসুলদের। নবীজী (সা.)-এর জীবনই ধৈর্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত—মক্কার জন্মভূমি ছেড়ে হিজরত, ২৩টি যুদ্ধ পরিচালনা, কাবাঘর মুক্ত করা—অগণিত দুঃখ-কষ্টেও তিনি ধৈর্যের আলো ছড়িয়ে গেছেন।

অতএব, মুমিন হতে হলে ধৈর্যকে জীবনসঙ্গী করতে হবে। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে প্রতিটি পরিস্থিতিকে তাঁর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবে মেনে নিতে হবে।

আজকের সংকটময় সময়ে আমাদের জীবনের প্রতিটি সমস্যা, প্রতিটি সংগ্রাম ও আঘাত মোকাবিলার একমাত্র সঠিক পথ হলো ধৈর্য। আল্লাহর বান্দা হয়ে তাঁর নির্দেশ মানা, পরীক্ষার সামনে অটল থাকা এবং ধৈর্যের ভেতরেই মুক্তির আলো খুঁজে নেওয়া।

আসুন, আমরা সবাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশিত ধৈর্য আঁকড়ে ধরি। তবেই বিপদের অন্ধকার কেটে যাবে এবং আল্লাহর বিশেষ সাহায্য আমাদের পথ আলোকিত করবে।

মন্তব্য