একটি সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে তিন উপজেলার বাসিন্দা

  • Company Logo
    ডেস্ক রিপোর্ট , বর্তমান
    প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার ০৫:১২ পিএম
একটি সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে তিন উপজেলার বাসিন্দা
একটি সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে তিন উপজেলার বাসিন্দা

সরকার বদলেছে বারবার, কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার মিলনস্থল চণ্ডিডহর এলাকার মানুষের। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, অথচ একটি সেতুর অভাবে এই অঞ্চলের লাখো মানুষের জীবন আজও পিছিয়ে রয়েছে সময়ের অনেক পেছনে।

সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য—সবক্ষেত্রেই চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন তিন উপজেলার অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ।

স্বাধীনতার পর থেকে এ অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন সময়ে পাঁচজন প্রভাবশালী মন্ত্রী পেলেও কেউই পারেননি চণ্ডিডহর সেতু বাস্তবায়ন করতে। তাই স্থানীয়দের আক্ষেপ— “রাজা আসে, রাজা যায়; আমাদের দুর্দশা রয়ে যায় আগের মতোই।”

চণ্ডিডহর হলো শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাইকাপন গ্রাম, জগন্নাথপুরের তেলিকোনা এলাকা ও দিরাইয়ের হোসেনপুর বাজারকে পৃথক করা মহাসিং, ডাউকা ও খামারখাল নদীর মোহনা। এই নদীর মোহনাতেই চণ্ডিডহর নামে পরিচিত এলাকা গড়ে উঠেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, হোসেনপুর বাজার থেকে প্রতিদিন একটি স্টিলের ট্রলার যাত্রীবোঝাই করে পাইকাপন ও তেলিকোনা পাড়ে যাতায়াত করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ এই ট্রলারে নদী পার হন। ফলে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।

পাইকাপন গ্রামের শিক্ষার্থী রুবাইয়া বেগম, মাহবুবা আক্তার ও রুবেল বলেন, “প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে নদী পার হতে হয়। কখনও নৌকা ডুবে যায়, আবার বিলম্বে পৌঁছানোর কারণে পরীক্ষায় দেরি হয় বা ক্লাস মিস করতে হয়।”

ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জীবান জানান, “ব্রিজ না থাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কপথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ নেই। ফলে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যায়, বাজারে জিনিসপত্রের দামও বেশি পড়ে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত।”

স্থানীয় মজু মিয়া, সেলাল মিয়া ও রওশন আলী বলেন, “দশকের পর দশক আমরা চণ্ডিডহরে একটি সেতুর দাবিতে আন্দোলন করছি। এক সেতুর অভাবে জীবন ঝুঁকির মধ্যে রেখে প্রতিদিন মানুষ পারাপার করছে। এমনকি জরুরি রোগী পরিবহনের সময়ও ভোগান্তির শেষ নেই। সম্প্রতি এক প্রসূতি নারী সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে নৌকাতেই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।”

তাদের অভিযোগ, “ভোটের সময় নেতারা এসে আশ্বাস দেন, কিন্তু নির্বাচনের পর কেউ আর খবর নেন না। সরকারি কর্মকর্তারা এসে মাটি পরীক্ষা ও মাপজোখের কাজ করেন, কিন্তু বাস্তবে কোনো অগ্রগতি নেই।”

তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত চণ্ডিডহর সেতুর অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, “আগের সরকারের সময় ৬১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে এই সেতু ও দিরাইয়ের জগদল ইউনিয়নের সড়ক অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রকল্পটি এখন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা যাবে।”

মন্তব্য