বিশ্ব
ইসরায়েলকে সাবধান করলেন বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করা ঠিক হবে না। তবে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের এই মিত্র দেশকে ছেড়ে যাবেন না বলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দেন।
তিনি আরো বলেন, গাজা যুদ্ধে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গি ইসরায়েলের উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি করেছে। গত শনিবার সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অসন্তোষ ক্রমাগত বাড়ছে। এর মধ্যেই নেতানিয়াহুকে নিয়ে এই মন্তব্য করলেন বাইডেন।
এদিকে, দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে আক্রমণ নিয়ে ইসরায়েলের রেড লাইন (চূড়ান্ত সীমা) নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন বাইডেন।
বাইডেন বলেন, নেতানিয়াহুর ‘ইসরায়েলকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।
হামাসের পিছু ধাওয়া করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু গৃহীত পদক্ষেপের ফলে নিরপরাধ প্রাণ ঝরে যাওয়ার দিকে তাঁকে আরো মনোযোগ দিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার মতে তিনি (নেতানিয়াহু) ইসরায়েলের উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করছেন।’ তবে রাফাহ শহরে ইসরায়েলের সম্ভব্য আক্রমণের ব্যাপারে বাইডেনের মন্তব্য ছিল অস্পষ্ট।
আগের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এক বক্তব্যে ৮১ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট নেতা বলেন, ‘আমি কখনোই ইসরায়েলকে ছেড়ে যাব না। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এখনো নাজুক। ইসরায়েলকে সুরক্ষিত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ইসরায়েল সীমা লঙ্ঘন করলেও তাদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা হবে না।’
গাজার পথে মার্কিন জাহাজ
ফিলিস্তিনের গাজা উপকূলে অস্থায়ী বন্দর নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি ছেড়েছে মার্কিন সামরিক জাহাজ।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাইডেন অস্থায়ী বন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার ৩৬ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে সামরিক জাহাজ পাঠানোর খবর সামনে এলো।
গাজার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের রাস্তা নির্মাণ
সম্প্রতি গাজার মাঝ বরাবর একটি রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্যাটেলাইট চিত্রে এই রাস্তা দেখা গেছে। বিষয়টি বিবিসি যাচাই করেছে। পণ্য ও ত্রাণ সরবরাহের উদ্দেশ্যে এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা
বিশ্ব
বাইডেনের ভাষণে ট্রাম্পের জোরালো সমালোচনা ও কিছু ঘোষণা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই বছরে দুই রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে। অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের মতো ক্ষেত্রে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যথেষ্ট সাফল্যের দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও জনমত সমীক্ষায় তিনি ভালো ফল করতে পারছেন না। বয়সের কারণে তিনি আরো চার বছর ক্ষমতায় থাকার উপযুক্ত কি না—সেই বিতর্ক তাঁর পুনর্নির্বাচনের ওপর কালো ছায়া ফেলছে। অন্যদিকে মামলা-মোকদ্দমা ও বিতর্কের ধাক্কা সামলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের মনোনয়নের পথে এগিয়ে চলেছেন।
এমনই প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্টের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে নিজেকে শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন বাইডেন। ভোটারদের মন জয় করতে একাধিক পদক্ষেপের ঘোষণা দিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য লড়াই করছেন, তার আরো প্রমাণ হিসেবে ধনী ও বড় কম্পানির ওপর করের হার বাড়ানোর ঘোষণা দিলেন বাইডেন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বল্প আয়ের মানুষের করের বোঝা কমাতে চলেছেন তিনি।
তবে সংসদে বর্তমানে অচলাবস্থার কারণে সেসব প্রস্তাব আদৌ অনুমোদন পাবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।
ইতিবাচক পদক্ষেপের পাশাপাশি বাইডেন তাঁর ভাষণে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের জোরালো সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট লিংকন ও গৃহযুদ্ধের সময়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র এমন হুমকির মুখে পড়েনি। সরাসরি ট্রাম্পের নাম মুখে না এনেও মোট ১৩ বার তিনি ‘আমার পূর্বসূরি’ হিসেবে তাঁর উল্লেখ করে রাশিয়ার কাছে নতিস্বীকার করার অভিযোগও করেন।
সামরিক জোট ন্যাটো সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন বাইডেন।
ট্রাম্পের জোরালো প্রভাবের কারণে রিপাবলিকান দলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও কটু মন্তব্য করেন বাইডেন। বিশেষ করে মেক্সিকো সীমান্তে অনুপ্রবেশ কমাতে তাঁর প্রশাসনের প্রস্তাবে বাধা দিয়ে তারা দেশের ক্ষতি করে শুধু রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সেই বিল পাস হলে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরো জোরালো করা সম্ভব বলে বাইডেন দাবি করেন। সংঘাতের বদলে সহযোগিতার মাধ্যমে সীমান্তের সমস্যা সমাধানের পক্ষে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ডেমোক্র্যাট দলের সব সমর্থকের মন জয় করতেও বাইডেন তাঁর ভাষণে কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের অবিচল সমর্থনের কারণে তাদের মধ্যে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা কিছুটা দূর করতে বাইডেন গাজা উপকূলে অস্থায়ী বন্দর তৈরি করে সেখানে আরো ত্রাণ সাহায্য বণ্টনের অঙ্গীকার করেন। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে সেই নির্দেশ দিলেও গাজায় মার্কিন সেনা প্রবেশ করবে না বলে বাইডেন আশ্বাস দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির ডাক দেন।
বিশ্ব
ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে : হাঙ্গেরি
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে তিনি অর্থায়ন করবেন না। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান রবিবার এ মন্তব্য করেছেন।
২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে অরবান তাঁর এই দীর্ঘমেয়াদি মিত্রকে প্রকাশ্যে সমর্থন করছেন। ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর রক্ষণশীল এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে তিনি (ট্রাম্প) একটি পয়সাও দেবেন না।
এ কারণেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে।’ সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুনরায় নির্বাচিত হলে ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে’ যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।
অরবান রবিবার দিনের শেষের দিকে হাঙ্গেরির এম১ টিভি চ্যানেলকে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ইউক্রেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না।
যদি আমেরিকানরা ইউরোপীয়দের সঙ্গে অর্থ ও অস্ত্র না দেয়, তাহলে যুদ্ধ শেষ। যদি আমেরিকানরা অর্থ না দেয়, তবে ইউরোপীয়রা একা এই যুদ্ধে অর্থায়ন করতে অক্ষম। তারপর যুদ্ধ শেষ হবে।’
তিনি আরো বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিভাবে শেষ করা যায় সে সম্পর্কে ট্রাম্পের ‘বেশ বিশদ পরিকল্পনা’ রয়েছে।
তবে তিনি এ নিয়ে কোনো বিশদ বিবরণ দেননি।
এদিকে অরবানের টিভি সাক্ষাৎকারের বিষয়ে ট্রাম্প প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। তবে ট্রাম্পের মার-এ-লাগো প্রাসাদে তাঁদের শুক্রবারের বৈঠকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর অতিথির প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ভিক্টর অরবানের চেয়ে ভালো, স্মার্ট বা ভালো নেতা আর কেউ নেই। তিনি অসাধারণ।
এদিকে মার্কিন সফরের সময় অরবান বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেননি। বাইডেন নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রেসিডেন্টম নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একজন সফররত বিদেশি নেতার পক্ষে বর্তমান নেতৃত্বকে ডাকা ছাড়াই সাবেক প্রতিপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সহকর্মী ইইউ নেতাদের কাছ থেকে বারবার কঠোর সমালোচনার শিকার হয়েছেন। অরবান তাঁর প্রতিবেশী ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতেও অস্বীকার করেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিয়েভ জিততে অক্ষম।
ইইউ নেতারাও ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বিগ্ন, ট্রাম্প দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেন ও ন্যাটো সামরিক জোটে দেশটির সামরিক ও আর্থিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। রিপাবলিকান বিরোধিতার কারণে মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের জন্য ৬০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তাসহ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা বিল স্থগিত করা হয়েছে।
রুশ বাহিনীও সম্প্রতি পূর্ব ইউক্রেনে সাফল্য অর্জন করেছে। কারণ কিয়েভ গোলাবারুদের তীব্র ঘাটতিতে রয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল।
সূত্র : বিবিসি
বিশ্ব
হুথিদের লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন-ব্রিটিশ বাহিনীর হামলা, নিহত ১১
মার্কিন-ব্রিটিশ জোটের বিমান হামলা পশ্চিম ইয়েমেনের বন্দর শহর এবং ছোট শহরগুলোতে সোমবার আঘাত হেনেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছেন বলে ইয়েমেন সরকারের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন এই হামলার ঘটনা ঘটল।
এদিকে প্রধান বন্দর শহর হোদেইদাহ এবং রাস ইসা বন্দরসহ দেশটিতে কমপক্ষে ১৭টি বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে বলে হুতি নিয়ন্ত্রিত প্রধান টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল আল মাসিরাহ জানিয়েছে।
ইসরায়েলি আক্রমণের শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে গত বছরের নভেম্বর থেকে ইরান-সমর্থিত হুতিরা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা শুরু করে। ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা থামাতে ইয়েমেনে হুতিদের সামরিক অবস্থানগুলোতে পাল্টা হামলা শুরু করে মার্কিন ও ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী। কিন্তু তাদের এসব হামলা হুতিদের থামাতে ব্যর্থ হয়। হুতিরা হামলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে মার্কিন ও ব্রিটিশ জাহাজগুলোকেও তদের লক্ষ্যস্থল করে তোলে।
সম্প্রতি ইয়েমেনের হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রথমবারের মতো তিনজন নাবিক নিহত ও একটি ব্রিটিশ জাহাজ ডুবে যায়। এ ঘটনার মাত্র কয়েক দিন পরেই এই হামলার ঘটনা ঘটল। হুতিরা গত বুধবার এডেন বন্দরের উপকূলে বার্বাডোসের পতাকাবাহী, গ্রিসের পরিচালনাধীন ‘ট্রু কনফিডেন্স’ নামের একটি জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তাদের হামলায় জাহাজটির তিনজন ক্রু নিহত ও আরো বেশ কয়েকজন আহত হন।
এর কয়েক দিন আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি হুতিদের হামলায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্রিটিশ মালবাহী জাহাজ ‘রুবিমার’। প্রায় দুই সপ্তাহ পর জাহাজটি ডুবে যায়। অনেক জাহাজ এখন আফ্রিকার কেপ অফ গুড হোপের পাশ দিয়ে যাতায়াত করছে। যা ব্যাপক ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে পণ্য পরিবহনে।